ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পংক্তি আর ” সব কটা জানালা খুলে দাওনা। “ওরা আসবেই….চুপি চুপি যারা এ দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ”
অর্থাৎ এই জগৎ মানুষকে স্মরণ রাখতে চায় না বরং চায় শধু সেই মানুষের কর্মকে । অথচ মানুষ চায় এর পুরো উল্টটা। মানুষ চায় তার কর্মের পাশাপাশি তাঁকেও যেন মানুষ স্মরণ করে । অন্যদিকে যারা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আত্মত্যাগের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেছেন মূলত তারাই স্মরণীয় আর বরণীয় মূলত এই বিষয়গুলোকে চিন্তা করে জানালা খুলে দিয়েছে গন্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদ চট্টগ্রাম।ইতিহাসের বিভিন্ন গুনিজনদের দৃষ্ঠান্ত তোলে ধরে বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত এক গুণীজন স্মরন সভা ও মরনোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল (উপ-সচিব) উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট নুরুল মুহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মাওলানা নুরুল হক সিকদার ও এডভোকেট দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় ১৯ ফেব্রুয়ারী’২২ ইং শনিবার সকাল ১০ .৩০ সময় গন্ডামারা-বড়ঘোনা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০২১ সাল-পরবর্তী সময়কালীন উক্ত ইউনিয়ন থেকে যেসব গুনীজন মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের মধ্য থেকে ৬ গুণীগুণীজনকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠান বর্ণাঢ্য আয়োজনে সম্পন্ন হয়।
সংগঠনটি প্রথমবারের মতো যেসব গুণীজনদের কে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করেছেন তাঁরা হলেন, বিশিষ্ঠ গুনিজন মাস্টার আব্দুল খালেক চৌধুরী, মুফতি আব্দুস সামাদ সিকদার, মাওলানা ফরিদুল আলম, বিশিষ্ট সমাজসেবক মোক্তার আহমদ মেম্বার, স্বর্গীয় পুলিন বিহারী সুশীল ও মাস্টার কে,এম ইলিয়াছ।
স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ডক্টর মোঃ ফরিদ উদ্দিন ফারুক, বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুখ, কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা হাসনা হেনা চৌধুরী, বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ইন্সপেক্টর ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম, বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম , গন্ডামারা বড়ঘোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বাবু অবিনাশ চন্দ্র দেব,ও বঙ্গবন্ধু পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ওমর ফারুক,সংগঠনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেন, হাসান মুরাদ চৌধুরী,ইলিয়াছ চৌধূরী, ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংগঠনের উপদেষ্টা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সংগঠনের সহ-সভাপতি এনামুল হক সিকদার মানিক, চট্টগ্রাম সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের জি,এস জাহেদুল হক চৌধুরী মার্শাল,দক্ষিন চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের সহঃসভাপতি নাঈম উদ্দিন মাহাফুজ প্রমুখঃ।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক অধ্যাপক ডক্টর মোঃ ফরিদ উদ্দিন ফারুক গণ্ডামারা ইউনিয়নের নামকরণের যথার্থ সার্থকতা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন নিজেদের স্বকীয় মেধা, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিদীপ্ততায় যুগে যুগে মেধার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলে পিছিয়ে পড়া সমাজ আলোকিত হবে। একটি সুন্দর, সৃজনশীল ও আলোকিত সমাজ বিনির্মাণ গড়তে যারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গেছেন তাদের প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা দেখানো প্রত্যেকেরই নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে অংশীদার হিসেবে গন্ডমারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই সময়ের সাহসী মেধাবী সমাজ সংস্কারকদেরকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করছে যা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শিক বার্তা ।
সহকারী কমিশনার ভূমি ওমর ফারুক বলেন, বাঁশখালী প্রান্তিক এলাকায় এত গুনীজন আছে তা আমার ইতিপূর্বে জানা ছিল না সত্যিকার অর্থে প্রোগ্রাম এসে আমি অভিভূত হয়েছি। ভূমি সংক্রান্ত যেকোন জটিলতা নিয়ে লুঙ্গি পরে কেউ আমার অফিসে আসলেও তাঁকে সেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অপরদিকে বাঁশখালী থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন বাঁশখালীর মানুষগুলো সহজ সরল ,এই জনপদে ডাকাতি চুরি-চামারি দৃশ্য খুব একটা নেই। নৈতিকতা অর্জন করতে হলে ধর্মিয় শিক্ষার অনুকরন ও অনুসরণ অপরিহার্য। ভাল মানুষদের মধ্য থেকে গুনিজন সৃষ্টি হয়। আর যে সমাজ গুনিজনদের কদর করতে জানেনা, সম্মান দিতে জানেনা, সে সমাজে গুনিজন সৃষ্টি হয়না। , মসজিদ,মন্দির ,গির্জা প্যাগোডা উপাসনালয়ে না গেলে কোন দিন ভালো মানুষ হওয়া যায়না বলেও মন্তব্য করেন ।
সংগঠনের সভাপতি নুরুল মোহাম্মদ কাদের সমাপনী বক্তব্যে বলেন ,বর্তমানে মানুষ টাকার পিছনে ছুটছে, অর্থ-সম্পত্তি থাকলেই গুণী ব্যক্তি হওয়া যায় না।
সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি আর সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে যারা কাজ করেছেন তাদেরকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মদের কে একটি মেসেজ প্রদান করতে চান গন্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদ চট্টগ্রাম। প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। জীবনে ভালো কাজ করলেই জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরেও মানুষ আজীবন তাঁদেরকে স্মরণ করবে।
গুণীজন পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের স্মৃতিচারণ করেন মরহুম মাওলানা আব্দুল খালেক জৈষ্ঠ পুত্র ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী, মরহুম মাওলানা আব্দুস সামাদ সিকদারের সুযোগ্য তৃতীয় পুত্র মাওলানা নুরুল্লাহ সিকদার, মরহুম মুকতার আহমদ মেম্বারের জ্যেষ্ঠপুত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, স্বর্গীয় পুলিনবিহারী পুত্র অসিত বিহারী সুশীল ও কে এম ইলিয়াসের পুত্র মোহাম্মদ শাফায়েত হোসেন।
বাবার স্মৃতিচারণে ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন , আমার বাবা একজন শিক্ষাগুরু ছিলেন না একজন আদর্শবান পিতা ও বটে। তিনি যেমনি ভাবে শাসন করতেন অনুরূপভাবে আদর স্নেহ করতেন পরম মমতায়
অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম বলেন দীর্ঘদিন বাবা এই জনপদে মানুষের সালিশি কার্যক্রমে লিপ্তছিল তাই তাঁর আচরণে কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কোন থেকে দেখার আহবান রাখেন।
একইভাবে মাওলানা নুর উল্লাহ সিকদার বাবার স্মৃতিচারণে বলেন প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে সুতরাং ভালো কর্মফল থাকলে অবশ্যই মৃত্যুর পরেও মানুষ শ্রদ্ধা আর সম্মান করে।
স্মরণসভায় বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বাঁশখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রশংসা করে বলেন, বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নে অনেক গুনিজন জন্ম নিয়েছে। যারা দির্ঘদিন ধরে প্রচারের আড়ালে ছিল, গন্ডামারা উন্নয়ন পরিষদ গুনিজনদের মরনোত্তর সম্মাননা প্রদান করে যে দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করলেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের কে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানে সহায়তা করার মতো নানা বিধ কর্মকাণ্ডে বেশ প্রশংসিত হয়েছে সংগঠনটি।