বৃহস্পতিবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঁশখালীতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, বাঁশখালী চট্টগ্রাম।। 
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে কক্সবাজার ও দক্ষিন চট্টগ্রামে ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে যান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। রাত ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বাতাসের তাণ্ডবে  লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সমগ্র বাঁশখালী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গন্ডামারা, সরল,বাহারছড়া, রায়ছড়া, কালিপুর, পুইছড়ি, চম্বল, শিলকুপ, ছনুয়া,শেখেরকিল ইউনিয়নসহ পৌরসভায় কাঁচা অনেক বাড়িঘর,ক্ষেত খামার বাতাসের তোড়ে উড়ে গেছে। বাড়ির উপর গাছ চাপায় মারা যান উত্তর সরলের কবির  আহমেদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৭০)।
১৩ বছরের গড়া বাঁশখালী উপকূলীয় লাইব্রেরি চোখের পলকে  তছনছ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক  সাইফি আনোয়ারুল আজিম জানান ১৩ বছরের তিলে তিলে গড়া লাইব্রেরীটি ঘর বাতাসের তান্ডবে উড়ে গিয়েছে,৮ হাজার বই সমৃদ্ধি এই লাইব্রেরির দুই হাজারের অধিক বই বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
বাহারছড়া রত্নপুর ইউনিয়নে মরহুম ইসলামিয়ার বসতঘরে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে  চুরমার হয়ে গেছে, একই বাড়ির আজগর হোসেন সওদাগর ও আশরাফ আলী ঘর ও ভেঙে চড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । 

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সমগ্র বাঁশখালী  পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।

আর এইদিকে পরিপুর্নভাবে লাইন চালু করতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী জোনাল অফিসের পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম রীশু কুমার ঘোষ,২৫ অক্টোবর’২৩ ইং বুধবার পর্যন্ত বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুতের বিতরন ব্যবস্থার ৬০% লাইন পরিদর্শন শেষে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৩৩কেভি লাইনের ৪ টি খুঁটি, টাওয়ারের ১ টি খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। ২২ টি খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে, ১৮ টি খুঁটি বিপদজনকভাবে হেলে পড়েছে,৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের উপর গাছ পড়ে আছে প্রায় ১৪০টি, ক্রস আর্ম ভেঙ্গে গেছে ২২টি, ব্রেস ভেঙ্গে গেছে ৬০টি, ইনসুলেটর ভেঙ্গেছে ২০৪টি এবং প্রধান সঞ্চালন লাইনের, তার ছিড়ে গেছে প্রায় ১২টি স্পটে ।

এছাড়া প্রধান সড়ক সহ বিভিন্ন জায়গায় ১৮ কেভি লাইনের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে ১৬৫টি, খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে ৫০টি, খুঁটি হেলে পড়েছে ২০৩টি, ১১ কেভি লাইনের উপর গাছ পড়ে আছে ১৫২০টি, ক্রস আর্ম ভেঙ্গে গেছে ৭৫টি, ব্রেস ভেঙ্গে গেছে ১০৮টি, ইনসুলেটর ভেঙ্গে গেছে ৩৬২টি, তার ছিড়ে গেছে ১২০০স্পটে, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ৪৫টি, মিটার ভেঙ্গে গেছে ৯৬০টি এবং সার্ভিস ড্রপ ছিড়ে গেছে ৬৫৪টি।ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান সবছেয়ে বেশি হয়েছে উপকূলীয় ইউনিয়ন ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরলে। তিনি আরো বলেন, গ্রাহকদের নুন্যতম সেবা চালু করতে বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুতের জনবল দিবারাত্রি মাঠে সক্রিয় থেকেও গত ২৪ ঘন্টায় ৩৩ কেভি এবং ১১ কেভি কোন লাইন চালু সম্ভব হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের প্রশাসন ও মাঠ কর্মিরা বিরতিহীনভাবে কাজ করার পরও পরিপুর্নভাবে সঞ্চালন লাইন চালু করতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান ডিজিএম রীশু কুমার ঘোষ।

দুর্গত এলাকায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান আর  সার্বিক পরিস্থিতি জানতে বাঁশখালী নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার কে বারবার ফোন দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি,তবে পৌরসভার মেয়র  এডভোকেট তোফাইলবিন হোসাইন ধারনা করছেন সমগ্র বাঁশখালীতে ৩০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে হাজার কোটি টাকার পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

প্রাবন্ধিক নুরুল মোহাম্মদ কাদের জানান বাতাসের এমন তান্ডব ইতিপূর্বে আর দেখিনি হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বাতাসের গতিবেগে উড়ে গেছে ফসলি ক্ষেত-খামার নষ্ট হয়েছে, মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজার হাজার মানুষ। এই ক্ষয় ক্ষতির কাটিয়ে উঠতে মানুষের বহুদিন সময় লাগবে।

শেয়ার করুন