আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় নির্মিত রাম মন্দিরে আজ সোমবার (২২ জানুয়ারি) প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাম মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো অযোধ্যা। বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণে হিন্দু সম্প্রদায় খুশি হলেও বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন স্থানীয় মুসলিমরা?
১৯৯২ সালে যখন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয় তখন পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ বলছিলেন রাম মন্দিরের পেছনে বাস করা ফুলজাঁহা।বাবরি মসজিদ যখন ভেঙে ফেলা হয় তখন তার বয়স ছিল ৯ বছর। তিনি বলেন, এখন অযোধ্যায় শান্তিই রয়েছে, কোনো সমস্যা নেই। এত কঠিন পথ যখন আমরা পেরিয়ে এসেছি, আগামী দিনে কী হবে দেখা যাবে। একটা আশঙ্কা যদিও থেকে যায় যে কখন কিছু ঘটে না যায়, তবে অযোধ্যায় এখন শান্তিই আছে।ফুলজাহাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেই হাফিজ-উর-রহমান থাকেন। ৩১ বছর আগের সেই দাঙ্গার দিনে, যে দাঙ্গায় ফুলজাহাঁর বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছিল, তিনি একটা হিন্দু পরিবারের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তবে সেই দাঙ্গায় নিজের জ্যাঠা আর বড়ভাইকে হারিয়েছিলেন হাফিজ-উর-রহমান।তিনি বলেন, ওই দাঙ্গার পর থেকে এখানে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় আছে। কিন্তু এখনও অযোধ্যায় বড় কোনো আয়োজনে যখন লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয় তখন কিছুটা ভয়ে থাকি আমরা। এবারও সেরকমই একটা চাপা ভয় আছে। আশা করি শান্তিতেই মিটবে সব কিছু
প্রায় ৩০ লাখ মানুষের অযোধ্যা জেলায় পাঁচ লক্ষ মুসলমানও থাকেন। এদের মধ্যে হাজার পাঁচেক মানুষ নতুন রাম মন্দিরের আশে পাশেই থাকেন।অযোধ্যা লাগোয়া শহর ফৈজাবাদে মুহম্মদ খালিক খানের ষ্টেশনারি দোকান আছে। তারা কয়েক প্রজন্ম এখানেই বসবাস করেন। তিনি বলেন, ১০ দিন আগে টাটশাহ মসজিদে অযোধ্যা থেকে কয়েকজন এসেছিলেন। তারা বলছিলেন যে প্রচুর মানুষ অযোধ্যায় আসবেন, তাই তারা আপাতত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
তবে ওলামাগণ তাদের বোঝান যে আপনারা ঘরবাড়ি ছেড়ে কেন যাবেন, আমরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। এরপরে পুলিশের পক্ষ থেকেও তাদের বোঝানো হয়, তারাই রক্ষা করবেন সবার। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি অনেক মুসলিম পরিবার ভয়ে সাময়িক সময়ের জন্য অন্য এলাকায় চলে গেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। এরপর অযোধ্যা-সহ পুরো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ায়, তাতে অন্তত দুই হাজার মানুষ মারা যায়।
এরপরে হিন্দু আর মুসলমান- দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট, তারপরে সুপ্রিম কোর্টে লম্বা আইনি লড়াই চলে। হিন্দু সংগঠনগুণোর বক্তব্য ছিল বাবরি মসজিদ আসলে রাম জন্মভূমি আর তা বানানো হয়েছিল একটি মন্দির ধ্বংস করেই।
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ২০১৯ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে জানায় বাবরি মসজিদ অন্যায়ভাবে ভাঙ্গা হয়েছিল। তবে শীর্ষ আদালত এটাও নির্দেশ দিয়েছিল যে অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে মন্দির তৈরি হবে।
আদালতের নির্দেশেই অযোধ্যা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুরে একটা নতুন মসজিদ বানানোর জন্য জায়গা দেওয়া হয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা