মুহাম্মদ মহিউদ্দিন।।
★সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: দীর্ঘ ৮ মাসেও শুরু হয়নি কাজ
★ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ ৫৬২ কোটি।
★কাজ পেয়েছে বিশ্বাস বিল্ডার্স, খুলনা শিপ ইয়ার্ড, ই ইন্জিনিয়ার্স ও এম এম কনস্ট্রাকশন।
পাউবোর সঙ্গে চুক্তির পরও কাজ শুরু করেনি তারা।
ভূগোলিক কারণে সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ। কিন্তু এখানকার মূল সমস্যা হল যাতায়াত এবং নদী ভাঙন। ভাঙ্গা-গড়ার এ খেলায়ও তার রূপ একটু কমেনি। যেন চির যৌবনা সে। সাগর আর নদীর অথই জলপথ পেরিয়ে দ্বীপের ভূখণ্ডে নামলেই শরীর যেন শিহরিত হয়ে ওঠে। চারিদিকে এক পলক চেয়ে মুহূর্তে মুগ্ধ হতে হয়। এমন সৌন্দর্য দেখে।
বর্তমানে এই দ্বীপের চারপাশ ভাঙনের মুখে।আর দ্বীপের ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। সন্দ্বীপ ও উরির চরে কৃষি জমি আছে ২৬ হাজার ৭৩৩ হেক্টর। কিন্তু সন্দ্বীপ উপকূল অরক্ষিত থাকায় নিয়মিত চাষাবাদ থেকে বিরত থাকেন বেশিরভাগ কৃষক। এতে ফসল উৎপাদনও কম হয়।
সন্দ্বীপ সুরক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গৃহীত ৫৬২ কোটি ২১ লাখ টাকার টেকসই প্রতিরোধের একাধিক প্রকল্পের কাজ ৪ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাতে নিয়ে গত ৮ মাস পর্যন্ত নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলির হর্রতা কর্তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের হাতেই অনেজটা জিম্মি সন্দ্বীপ বেড়িবাঁধ প্রকল্প,এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীরা।
কাজের অগ্রগতি বিষয়ে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পওর-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সায়েফ আহমেদ জানান, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আমরা প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করছি। ইতিমধ্যে চার কোম্পানিকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান একেবারেই কাজ শুরু করেনি। বাকিগুলো প্রতিষ্ঠান মালামাল নিচ্ছে কাজ শুরুর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। কেউ কেউ কিছু প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়নের জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করব। কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প এলাকায় সর্বক্ষণিক আমরা অবস্থান করছি।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা হাজার বছরের পুরনো দ্বীপটি হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার এই দ্বীপ ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এর মত কিংবা সামুদ্রিক কোন বিপর্যয় দেখা দিলে প্রতিবারই প্রতিগ্রস্ত হয় দ্বীপ এলাকার মানুষ, আতঙ্কে দিনাতিপাত জীবন যাপন করে দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে এই অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করতে সরকার চারদিকে বেড়িবাধ নির্মাণ করে সরকার। কিন্তু জলোচ্ছ্বাসে ৮-১০ ফুট উচু ঢেউয়ের কাছে সে বাঁধ কার্যকর অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে ভেসে যায় জনপদের পর জনপদ। এই অবস্থায় ব্লক বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে স্বস্তি পাবেন দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ। ঠিকাদারদের কার্যকর কোন তৎপরতা না দেখে সারাক্ষণ ভয় ও আতঙ্কে রয়েছেন এই জনপদের মানুষ। বড় কোন ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পেলেই ভয় আতকে উঠছেন তারা।
পাউবো সূত্রে জানায়, ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একনেকে সন্দীপ ব্লক বেড়িবাঁধ প্রকল্পের জন্য ৫৬২ কোটি ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ওই বছরের ১৫ অক্টোবর প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজের মাধ্যমে ১৫০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দরপত্র আহবান করা হয়। এতে অংশ নিয়ে বেশিরভাগ কাজ পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্স । ওই প্যাকেজে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার কাজ প্রতিষ্ঠানের হাতে।
চলিত বছরের ১৪ জানুয়ারি বিশ্বাস বিল্ডার্স এর সাথে পাউবোর চুক্তিবদ্ধ হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু চুক্তির ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজে হাত দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এই অবস্থায় যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে বিশ্বাস বিল্ডার্সকে গত ২০ অক্টোবর নোটিশ পাঠায় পাউবো। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের জুনে।
সন্দীপ ব্লক বেড়িবাঁধ ৪ টি প্যাকেজে মোট ১১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কাজ পায় ই- ইঞ্জিনিয়ার্স নামে আরেকটি কোম্পানি । এছাড়া খুলনা শিপ ইয়ার্ড তিনি প্যাকেজে ৮৬ কোটি ৬৯ লাখ এম এম কনস্ট্রাকশন ২ টি প্যাকেজে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার কাজ পায়। এসব প্রতিষ্টানও পাউবো সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে কাজ শুরু করেনি।
স্থানীয়রা জানান, সব শেষ অবস্থা দেখতে একাধিকবার সন্দীপ পরিদর্শন করেন প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ। তিনি বেড়িবাঁধকে টেকসই করা বাস্তবায়ন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি আরও কি কি করণীয় রয়েছে তা সরজমিন দেখে যান।
সন্দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল খালেক মাস্টার বলেন, বিশ্বাস বিল্ডার্স সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ বাগিয়ে নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ঘুমিয়ে আছেন। কোন প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেনি তারা টাকা লুটপাট করার জন্য ব্যস্ত রয়েছে। দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষের কথা তারা মোটেই চিন্তা করছেন না। তিনি বলেন সন্দীপ এলাকায় বিশ্বাস বিল্ডার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি পূর্বেও অনেক কাজ করেছে সেখানেও বড় ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি করেছিল। এই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে এরপরেও কর্তৃপক্ষ কেন ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে তা বুঝতে পারছি না। এবারও কাজ নিয়ে তাদের কোন খবর নেই।
আমাদের এলাকাবাসীর দাবি চুক্তি ভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ না করলে পাউবো কর্তৃপক্ষ তাদের চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রয়োজনে পুনরায় টেন্ডার দিয়ে নতুন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হউক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপক ফিরোজুর রহমান বলেন আমরা আগেও সন্দীপে প্রকল্পের কাজ করেছি। আমাদের মালামাল সেখানে রয়েছে। বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু কাজ করতে হয়। আমরা সেগুলো করছি। দীর্ঘদিন বর্ষা মৌসুম ছিল এখন কাজ শুরু হবে ।
ই- ইঞ্জিনিয়ারস কোম্পানি কর্মকর্তা মো: মাসুদ বলেন, আমি এতদিন দেশের বাইরে ছিলাম তা ই আমার কাছে বিষয়টি আপডেট কোন তথ্য নেই। বিষয়টি জেনে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের কাজ শুরু করব।
সংবাদটির পাঠক সংখ্যা : ৮