রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই)। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা রেলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ বা পণ্য রাখা হয়। সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। কিন্তু এই যন্ত্রাংশের লোভ স্বয়ং রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। যাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই এরিয়ার থেকে প্রতিদিন চুরি হচ্ছে কোটি টাকার পণ্য যন্ত্রাংশ।
চুরির এই কাজে (সিজিপিওয়াই) গিরে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্রের অভয়ারণ্য সিন্ডিকেট। যাদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ইয়ার্ডের কর্মচারী, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও কতিপয় লোড- আনলোড শ্রমিক। সব মিলিয়ে যেন চোরের খনিতে ভরপুর (সিজিপিওয়াই) ইয়ার্ড। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন গণমাধ্যম কর্মীরা। অথচ অন্য কারো প্রবেশের নেই তেমন কোন বাধা।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সিআই মো: আবু সুফিয়ানের সাথে তিনি বলেন সাংবাদিক প্রবেশের কোন বাধা নেই। তবে ইয়ার্ডের প্রবেশের প্রত্যেকের পরিচয় এন্ট্রি করার নিয়ম রয়েছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো বাধার সম্মুখীন হন সাংবাদিকরা। অন্য কারো নাম এন্ট্রি বা আরএনবির বাঁধার সম্মুখীন ছাড়াই ইয়ার্ডের প্রবেশ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি বলেন,গত কয়েক বছর ধরে সিজিপিওয়াই ও (আরএনবি) স্টেশন এলাকায় রেলের মালামাল চুরি ও অপরাধ মূলক কার্যক্রম বেড়েছে আগের চাইতে বহুগুণ। আর সরকার পতনের পর অপরাধীরা সবাই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আইন আদালত প্রশাসন কাউকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
তিনি জানান, গত পাঁচ মার্চ ভোরে সিজিপিওয়াই এলাকায় অবস্থানরত একটি ইঞ্জিন থেকে তিনটি ব্যাটারি চুরি হয়। এ সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে একজন এলএম ও একজন এএলএমকে বরখাস্ত করা হয়। আর চুরির মত কিছু হলেই সবাই বলে আরএনবি সদস্যরা কাজ করে না তাই হয়তো কঠোর নজরদারি করছে।
সিজিপিওয়াই চৌকির নায়ক দুলাল জানান, চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই এলাকায় গেল ১৭ জানুয়ারি চোর চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। এ ঘটনার পর গ্রেপ্তাকৃত দুইজনসহ মোট তিনজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইঞ্জিনের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের অবহেলায় যদি কোন চোরের ঘটনা ঘটে, তবে এই দোষ খার? যে যাই বলুক চুরি টাকাতে রেলওয়ে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা আমাদের কর্তব্য পালনের সদা প্রস্তুত এবং কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বদ্ধপরিকর।
এসআরবি স্টেশনের ইনচার্জ হাবিলদার পঙ্কজ রায় বলেন আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেরা নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছে আমরা বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়ে চোর চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করেছি তবে আমাদের লোকবল সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়েছে।
আরএনবির সদস্যরা জানান তাদের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে ওই সকল চোর চক্র বিভিন্ন ধরনের নাটক সাজাচ্ছে। যা আরএমবির কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে!
এছাড়াও তারা লোকবল সংকটকে নিরাপত্তা ত্রুটির মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন আর এনপির সদস্যদের অভিযোগ একটি স্বার্থন্বেষী মহল তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে।
সূত্র মতে নগরীর বন্দর থানা দিন এলাকায় অবস্থিত সিজিপিওয়াইতে বন্দরে আসার রেলের পণ্য রাখা হয়। এখান থেকে বন্দর ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) পর্যন্ত কন্টেইনার ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও এখান থেকে বিটিও ( ট্যাংক ওয়াগণ) ইয়ার্ড রয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় রয়েছে চোর চক্র।
চুরির ঘটনার সাথে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা থাকার অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মোঃ সুবক্তগীনের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সম্প্রতি সশরীরে দপ্তরে গিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলা এড়িয়ে যান। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম হিসেবে যোগদান করেন মোঃ সুবক্তগীন। এরপর থেকে তিনি যেদিন দপ্তরে থাকেন সেদিন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। সাংবাদিকসহ রেলের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার সুযোগও হয় না তার। যা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার মত।
এর আগে করোণাকালীন সময় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও দায়িত্বে ছিলেন মোঃ সুবক্তগীন। এসময় তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ সময় তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ছত্রছায়ায় যত অপকর্ম তিনি করেছেন। আর এখন খোলস পাল্টে তিনি পরিচয় দেন ছাত্র জীবনে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।












