শুক্রবার, ৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Add Your Heading Text Here

সাইনবোর্ডে সতর্কতা, বাস্তবে নৈরাজ্য যানজটে বন্দি পেকুয়া

Add Your Heading Text Here

Add Your Heading Text Here

কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক উপজেলা পেকুয়া। অথচ এই জনপদের প্রাণকেন্দ্র এখন যেন এক বিশৃঙ্খল যানজটে জর্জরিত এলাকা। যানজটের এমন বেহাল অবস্থা যে, পাঁচ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, অসহায় পরিস্থিতিতে পড়ছে শিক্ষার্থী, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানও।

সম্প্রতি আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী পয়েন্টে উপজেলা প্রশাসন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সতর্কতা জানালেও বাস্তবে তার কোনো প্রভাব চোখে পড়ছে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ ইজিবাইক কাউন্টার, ফলমূলের পসরা ও রাস্তার মাঝখানে ব্যবসা—সব মিলিয়ে সড়কজুড়ে চলছে অঘোষিত দখলযুদ্ধ। এমনকি কোথাও কোথাও পূর্বে স্থাপিত ডিভাইডার পর্যন্ত সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যেন শৃঙ্খলা নয়, নৈরাজ্যই এখানে নিয়ম।

আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালকের আসনে বসছে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু। প্রশাসনের চোখের সামনে এ যেন প্রকাশ্য আইন-লঙ্ঘনের উৎসব। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই সড়কে প্রাণ হারিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দীন (৫০) ও শিশু শিক্ষার্থী ইশরাক মনি (০৭)। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে বাজার তখন প্রকম্পিত হলেও, কিছুদিনের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায় প্রশাসনের চোখে।

পেকুয়ার অন্যতম বড় সমস্যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার নামে লোক দেখানো কার্যক্রম। যানজট নিয়ন্ত্রণে গত ১০ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হলেও, বর্তমানে সেই ব্যবস্থাও কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বাজারে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহবুব জানান, “আমরা মাত্র দুইজন দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই বিশাল বাজার এলাকার জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। জনবল সংকট, রাজনৈতিক ফোনকল, প্রভাবশালী মহলের চাপ—সব মিলে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।” তিনি আরও জানান, অবৈধ ইজিবাইকের বিষয়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে গেলেই বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়ার ইউএনও মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা এর আগেও দুটি বৈঠক করেছি, সাইনবোর্ড দিয়েছি, ছয়জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আবারও একত্রে বসে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “বাজারে ট্রাফিকের তদারকি, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। কিছু সংগঠন ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ইজিবাইকচালকদের বড় একটি অংশ থাকায় ব্যবস্থা নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।”

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রতিবছর এই বাজার থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পায়, অথচ সেবা দেয় না। এই অব্যবস্থাপনার শেষ কোথায়? আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।”

পেকুয়া আজ যেন একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলের পরিণত ছবি, যেখানে নিয়মভঙ্গই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে বাস্তবতার মুখে। এবং যেখানে একটি সড়ক শুধু মানুষের চলাচলের পথ নয়—তা হয়ে উঠেছে অপেক্ষার, অব্যবস্থাপনার, আর কখনো কখনো প্রাণহানির প্রতীক।

এই সংকটের সমাধান শুধু সাইনবোর্ড দিয়ে নয়, দরকার দৃঢ় প্রশাসনিক সদিচ্ছা, নিয়মতান্ত্রিক শাসন এবং নাগরিকদের আন্তরিক অংশগ্রহণ।

শেয়ার করুন