কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ড নাথপাড়ায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধাকে তাঁর পৈতৃক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। নিজের স্বামী মৃত হেমন্ত কুমার নাথের মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিতে আজীবন বসবাস করলেও এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধা নিধুবালা নাথকে ঘরছাড়া করেছে নিকটাত্মীয় কয়েকজন প্রভাবশালী সন্ত্রাসী।
বৃদ্ধা নিধুবালা নাথ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “আমার স্বামী হেমন্ত কুমার নাথের মালিকানাধীন ব্রিটিশ আমলের পুরনো বসতভিটায় আমার সারাজীবন কেটেছে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে গেলে ওই সুযোগে নিকটাত্মীয় কিছু সন্ত্রাসী ভিটায় দখল নেয়। আমি চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলে তারা আমাকে এবং আমার মেয়ে মিনতিবালাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়।”
ভুক্তভোগীর মেয়ে মিনতিবালা নাথ এই ঘটনায় পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি এমআর মামলা দায়ের করেন। পরে ইউএনও বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এইচ এম বদিউল আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে চেয়ারম্যানের প্রতিবেদনেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএস ১৪৪৩ নং খতিয়ানের বিএস ২৫১৪৪ দাগে মৃত হেমন্ত কুমার নাথের নামে ৫ গন্ডা জমি রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর নিধুবালা ও তাঁর দুই পুত্র এই জমির মালিক হন। বড় ছেলে রাজীব মারা যাওয়ায় এবং ছোট ছেলে সজল প্রবাসে থাকায় বসতবাড়িতে মা নিধুবালা ও স্বামী পরিত্যক্ত কন্যা মিনতিবালা নাথ বসবাস করছিলেন। কিন্তু নিধুবালা চিকিৎসার জন্য বাইরে গেলে সুযোগ বুঝে বিবাদীরা ভিটা দখল করে নেয়।
এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এইচ এম বদিউল আলম বলেন, “ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমরা সরেজমিনে তদন্ত করি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে অভিযোগের সত্যতা মিলে। বিবাদীরা শুধু ভিটা দখলই করেনি, বরং গ্রাম আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বৃদ্ধা নিধুবালা ও তাঁর মেয়ের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।”
মেয়ে মিনতিবালা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের পৈতৃক বাড়ি ভিটায় শতবর্ষী মাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটি শুধু আমাদের নয়, মানবতার ওপরই চরম আঘাত। আমরা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ চাই।”
এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি—শতবর্ষী বৃদ্ধার শেষ আশ্রয়স্থল যেন অন্যায়ভাবে কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।












