বৃহস্পতিবার, ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Add Your Heading Text Here

সিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাহারে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিলো সিইউজে

Add Your Heading Text Here

Add Your Heading Text Here

ট্রাফিক বিভাগের ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মে সাংবাদিকদের চোখ পড়াতেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ চটেছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এসব অনিয়ম জনসম্মুখে তুলে ধরার পথ রুদ্ধ করতেই তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও মত তাদের।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে নগরের এস এস খালেদ রোডে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব মন্তব্য উঠে আসে। সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সিএমপি কমিশনারের সাম্প্রতিক হুমকি, বেআইনি ও অশিষ্টতাপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে এ মানবন্ধনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় সাংবাদিক নেতারা বলেন, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই ট্রাফিক বিভাগের দুর্নীতি-অনিয়ম তুলে ধরেছে চ্যানেল-২৪ এর প্রতিবেদক এমাদুল হক। এ অনিয়মের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারের পর তদন্ত না করে উল্টো প্রতিবাদলিপির নামে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধানিষেধ আর হুমকিতে সিএমপির শীর্ষমহল এসবে জড়িত কিনা তাও প্রশ্ন রাখেন।

সম্প্রতি চ্যানেল-২৪ এর ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পুলিশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করে জরিমানা আদায় করছে, পরে সেই রিকশা আবার ধরা হচ্ছে। জরিমানার নামে নেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর্মকর্তাদের পকেটে যাচ্ছে।

মানববন্ধনে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করে না নিলে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন বলে হুঁশিয়ার করেন সিইউজে সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমরা কোনো পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়াইনি, কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও দাঁড়াইনি। আমরা দাঁড়িয়েছি আমাদের সহকর্মীর প্রতি একজন পুলিশ কর্মকর্তার হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।

‘প্রেসক্লাব যারা দখল করে নিজেদের হর্তাকর্তা ভাবছেন এ পরিস্থিতি আপনারা নীরব কেন? যখনই আমাদের অধিকারের প্রশ্ন এসেছে আমরা যুৎবদ্ধভাবে কাজ করেছি।’— যোগ করেন এই সাংবাদিক নেতা।

সিইউজে যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সহসভাপতি শহীদ উল আলম। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা নিশ্চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। প্রকৃত সাংবাদিকদের কোনো বন্ধু নেই, সাংবাদিকদের প্রকৃত বন্ধু হলো জনগণ।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা বলেন, সাংবাদিকরা জেগে উঠেছেন, তারা প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন। আজকের এ প্রতিবাদী কর্মসূচিতে সবার উপস্থিতিই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

সিএমপি কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, আমরা আপনার কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখতে রাজি নই। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে সাংবাদিকতা করি। তিনি সিএমপি কমিশনারের বক্তব্যকে ‘অশিষ্ট ও বেআইনী’ আখ্যা দিয়ে এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সিইউজের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, সাংবাদিকদের একটি অংশের নির্লজ্জতার কারণে আজ আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। এ সুযোগে পুলিশও সাংবাদিকদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছে।

সাবেক সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল বলেন, সাংবাদিকরা তাদের নিরাপত্তা এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য রাজপথে নেমেছেন। তবে সাংবাদিকতার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা আজও নিশ্চিত হয়নি।

সহকর্মীদের দৃঢ় থাকার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার সহকর্মীর প্রতিবেদনেই প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। হাটে হাড়ি ভাঙলেই সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা বারবার করা হয়েছে। কিন্তু আমার সহকর্মীরা কখনো পিছপা হননি।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের টিভি ইউনিটের প্রধান ও গাজী টিভির সিনিয়র রিপোর্টার তৌহিদুল আলম বলেন, আমার সহকর্মীর উপর চড়াও হয়ে সাংবাদিকতাকে রুদ্ধ করতে যারা চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আজ রাজপথে দাঁড়িয়েছি।

টিভি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে আজাদ বলেন, এমদাদুল হক সাংবাদিকতার সমস্ত এথিকস মেনে নিউজটি করেছিলেন। পুলিশের অনিয়মের জায়গায় হাত দিয়েছেন বলেই কমিশনারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএফইউজের নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রণব বড়ুয়া অর্ণব বলেন, ব্যাটারিরিকশা কেন্দ্রিক পুলিশের সমস্ত অনিয়ম ও দুনীর্তির তথ্য সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।

মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবির আহমেদ বলেন, আজকের এ প্রতিবাদী কর্মসূচি প্রমাণ করে বিপদের সময় সর্বস্তরের সাংবাদিকরা এক ও অভিন্ন থাকি। ৫ আগস্টের পর আমরা যেই বাংলাদেশ পেয়েছি তা আগের ধারাতেই চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চ্যানেল-২৪ এর প্রতিবেদক এমদাদুল হক বলেন, আমার নিউজে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম দুনীতির সুষ্পষ্ট তথ্য তুলে ধরার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সিএমপি কমিশনারের হুমকি দেয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।

দৈনিক আমাদের সময়ের ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ বলেন, সাংবাদিকরা যখনই পেশাদারিত্ব দেখাতে চায় তখনই এ ধরনের নির্যাতন নিপীড়ন আমাদের উপর নেমে আসে। পুলিশের ইমেজ এমনিতেই শূন্যের কোটায়। আপনারা দয়া সাংবাদিক নির্যাতনের মতো কাজ করবেন না।

টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিব বলেন, অবিলম্বে সিএমপি কমিশনারের দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।

মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সিইউজের সহসভাপতি স ম ইব্রাহিম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটির সভাপতি খোরশেদুল আলম, ডেইলি স্টারের ব্যুরো চিফ শিমুল নজরুল, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রুনা আনসারি, একুশে টিভির ব্যুরো চিফ হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম টিভি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক হোসাইন জিয়াদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীম, সিইউজের প্রচার সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য আহসান হাবিবুল আলম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, সাবেক প্রচার সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল প্রমুখ

শেয়ার করুন