দেশে করোনার সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ কাটতে না কাটতেই হাজির হচ্ছে তৃতীয় ঢেউ। মূলত এই তৃতীয় ঢেউ আসছে করোনার ‘ডেল্টা প্লাস’ ভ্যারিয়েন্টের হাত ধরে। গবেষকরা বলছেন, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সাধারণ উপসর্গ মাথাব্যথা, গলাব্যথা আর নাক দিয়ে সর্দি পড়া। যা কোভিডের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে শরীরে ভাইরাসের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চরিত্র ক্রমশ প্রকাশ পায়। অস্ট্রেলিয়াতে বেশ কিছু মানুষ এই নতুন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে আক্রান্ত, তাদের দেহে যে লক্ষণ দেখা গেছে তা কোভিডের সাধারণ চরিত্র থেকে বেশ আলাদা। প্রত্যেক মানুষেরই ইমিউনিটি সিস্টেম আলাদা। তাই এক একজনের শরীরে এই ভাইরাসের কার্যকারিতাও এক একরকম।
যেমন কোভিড সংক্রমিত হলে কারোর দেহে দেখা যায় তো কারোর গলা ব্যথা দেখা যায়। ট্রান্সমিশন, ট্রান্সক্রিপশন পদ্ধতির মাধ্যমে মানব দেহে ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে, যাকে ভাইরাল ফ্যাক্টর বলে। আর হোস্ট ফ্যাক্টর নির্ভর করে মানুষের বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্য, ডায়েট- এসব কিছুর ওপর। তাই একজন প্রবীণ মানুষের দেহে ভাইরাসের যে লক্ষণ দেখা যায় তার থেকে একজন অল্প বয়সীদের লক্ষণ সাধারণত আলাদা হয়। কোভিডের সঙ্গে এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সাধারণ লক্ষণগুলি হল- মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, সর্দি, জ্বর এবং কাশি। তবে এতদিন গন্ধ চলে যাওয়ার যে সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছিল তা এই তালিকায় অনেকটাই নিচে নেমে গেছে। মাঝবয়সীদের দেহে কোভিডের যে লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে তা সেইভাবে প্রাণঘাতী নয়। তবে অনেকেই যারা হালকা সর্দি, গলা ব্যথাকে মৌসুমি বলে মনে করছেন সেটি আসলে কোভিড-১৯ হতেই পারে, জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অনেক বৈশিষ্ট এখনো উন্মোচন করা বাকি আছে, যা নিয়ে এখনো পরীক্ষা নিরীক্ষা জারি রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাই এটি মানব দেহে ঢুকে কী রূপ নিতে পারে সে বিষয়ে অনেকেই সন্দিহান। তবে কোভিড-১৯ প্রতিহত করতে ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা লক্ষণীয় কাজ করছে বলে মত গবেষকদের। প্রায় ৯০ শতাংশ সুরক্ষা কবচ তৈরী করে দিতে সক্ষম এই দুটি ভ্যাকসিন। সম্প্রতি নিউ সাউথ ওয়েলস-এর একটি ঘটনা সামনে এসেছে। সেখানে একটি বার্থ ডে পার্টিতে ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ৬ জনের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছিল। এই ৬ জন বাদে বাকি ২৪ জনই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কবলে পড়েন। অনেক ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিনেশনের পরেও করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে, তবে তার প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা ততটা থাকে না, বা মৃত্যুর আশঙ্কাও অনেক কম। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি ছোয়াচে। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভ্যাকসিন নেয়ার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।