রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুসলিম’ শব্দ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের উত্তর প্রদেশে ঐতিহাসিক আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে (এএমইউ) ‘মুসলিম’ শব্দে তীব্র আপত্তি জানিয়ে এর বিরুদ্ধে আইনি অবস্থান নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার। গত ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে হলফনামার মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার অভিযোগ করে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিশ্ববিদ্যালয় নয় এবং তা হতেও পারে না। এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দেশটির প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অনুদান নেয়ার মানে এই নয় যে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যালঘু বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের পরিচিতি হারাবে। চতুর্থ দিনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। খবর ডেকান হেরাল্ড ও লাইভ ল। 

এর আগে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষের আইনজীবী তুষার মেহতা এই অবস্থানের ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে ঘোষণা করার মধ্যদিয়ে এটি এখন নির্দিষ্ট ধর্মীয় জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি খুইয়েছে। একে আর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় বলার যৌক্তিকতা নেই।তুষার মেহতা বলেন, ‘১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার আগেও জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত ছিল। তাই একে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু বা ভারতীয় মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।’এদিকে, ২০১৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার শুরু থেকেই আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলিম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তকমা তুলে দেয়ার বিষয়ে সক্রিয় রয়েছে। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়লেও মোদি সরকার যুক্তি দেখিয়েছে এই তকমা অসাংবিধানিক। রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে যে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়-একে ধর্মের ভিত্তিতে বিশেষ তকমা দেয়া দেশের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধেক আসন মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি-গোষ্ঠীর মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন, তা সমতাভিত্তিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল ইউপিএ সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর আপিল (আবেদন) বাতিল করে দেয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান আইনজীবী তুষার মেহতা। তিনি জানিয়েছেন, ‘সেন্ট্রাল এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন (ভর্তি সংরক্ষণ) আইন ২০০৬’ (২০১২ সালে সংশোধিত) এর ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিমদের জন্য আসন সংরক্ষণ রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে যখন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে, তখন থেকেই ভারতের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের লক্ষ্য করে বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনাও বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, মোদির বিজেপি সরকার ধর্মীয় মতবিরোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীর।
আরও পড়ুন  সৌদি আরবে ঈদের তারিখ ঘোষণা
শেয়ার করুন