মুহাম্মদ মহিউদ্দিন।।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি)। প্রতিবছর ৪ ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব লায়ন সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব রেজাউল করিম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা শহীদ সহরোওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এবিএম মাকসুদুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ কিডনী ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান
চমাশিহা ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ক্যান্সার চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হচ্ছে রেডিওথেরাপি মেশিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি মেশিন দরকার। সে হিসাবে আমাদের ১৭ কোটি মানুষের জন্য ১৭০টি মেশিন থাকা দরকার। আর চিকিৎসাসেবা সহজ করতে প্রয়োজন ২০০টি মেশিন। তবে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে আছে মাত্র ২০টি মেশিন। এর অর্ধেকের বেশি আবার নষ্ট। বিএসএমএমইউতে একটি মেশিন আছে। সব সময় সচল থাকে না, মাঝেমধ্যে নষ্টও থাকছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের অভাবও আরেকটি বড় উদ্বেগের কারণ। দেশে মোট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তিন শর বেশি হবে না। তাঁদের পক্ষে এত বেশি রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিফাতুজজাহান জাহান বলেন, ওষুধের খরচ অনেক বেশি। তবে আগের চেয়ে কিছু কমেছে। আগে যেখানে ৩০ হাজার লাগত, সেখানে এখন ১০ হাজার লাগছে। তবে কাঁচামাল দেশে তৈরি করা গেলে আরো খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। রোগীর খরচ না কমানো গেলে চিকিৎসাসেবায় বৈষম্য হবে, এটা স্বাভাবিক। তবে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে এসে টাকার অভাবে কেউ চিকিৎসা সেবা থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। অত্যাধুনিক লিনিয়র এক্সেলেটর রেডিওথেরাপি মেশিন আনা হয়েছে। অল্প খরচে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা ভালো চিকিৎসা সেবা পাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসা ব্যয় নাগরিকদের নিজ পকেট থেকে দিতে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। তাদের আয়ের বড় একটি অংশ এই স্বাস্থ্যসেবায় চলে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএআরসি) তথ্য মতে, ২০২২ সালে বিশ্বে নতুন করে দুই কোটি মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে।
মৃত্যু ৯৭ লাখ মানুষের। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য মতে, একই বছর বাংলাদেশে এক লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন মারা গেছে। দেশে ক্যান্সার রোগীদের নিবন্ধন না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, দেশে ১৫ থেকে ২০ লাখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। প্রতিবছর এই তালিকায় দুই লাখ রোগী যোগ হয়।
ক্যান্সার চিকিৎসায় যত ব্যয়
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় গড়ে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪০ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হয়। এই খরচ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৮১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধপত্র কিনতে। ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তরে গড়ে চিকিৎসা খরচ তিন লাখ ৩১ হাজার ২৪৩ টাকা। দ্বিতীয় স্তরে গড় খরচ ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৫ টাকা।
ক্যান্সারে মৃত্যুহার দ্বিগুণ হওয়ার শঙ্কা
তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল সেবন, স্থূলতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ২০৫০ সালের মধ্যে নতুন করে ৪.৮ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে কম আয়ের দেশে। দরিদ্র দেশগুলোতে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইএআরসি)।
সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ মিলিয়নে দাঁড়াতে পারে, যা ২০২২ সালের চেয়ে অন্তত ৭৭ শতাংশ বেশি।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার পায় ০.০১% রোগী
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় এবং ২০২৩ সালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশের ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার জার্নালে’ দেখা গেছে, দেশে বছরে ক্যান্সারের মতো নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত সাত লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবার প্রয়োজন। এই হিসাবের মধ্যে শিশু-কিশোর রয়েছে ৪০ হাজার