নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) রাজস্ব বিভাগে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতি না দিয়ে একেবারে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরকে পদোন্নতি দিতে পায়তারা চালাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে চসিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে।
সিনিয়রদেরকে পদোন্নতি না দিয়ে উপ-কর কর্মকর্তা পদে জুনিয়র ট্যাক্স কালেক্টর মো: সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান নামের ২ জন কে সাময়িকভাবে স্ব- বেতনে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে এমন গুঞ্জনের বিষয়টা চসিক পাড়ায় বেশ ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
চসিকের একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব শাখায় উপ-কর কর্মকর্তার শূন্য পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার জন্য পদোন্নতির আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়রদের নামের তালিকা অনুযায়ী ট্যাক্স কালেক্টর কর্মররত মাহবুর রহমান, দিদারুল আলম, মো: সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান মোট ৪ জন কে সাময়িকভাবে স্ব- বেতনে (অর্থাৎ পূর্বের বেতনে) পদায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে মো : সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান সর্বকনিষ্ঠ মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে তলে তলে এই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। যার কিছুটা সত্যতা মিলেছে চসিকের প্রধান নির্বাহীর কর্মকর্তার বক্তব্যেও।যদিও কথার মার পেছে পুরো প্রকৃত বিষয়টা তিনি এড়িয়ে গেছেন।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম থেকে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার টেবিলে এখনো ফাইল আসেনি । প্রমোশনের ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে, বোর্ড কমিটি রয়েছে তাদের সিদ্ধান্তের আলোকে প্রমোশন হয়। এর বাইরেও অনেক সময় মেয়র মহোদয় কাজের পারফরমেন্স ও সিনিয়রের ভিত্তিতে স্ব- বেতনে (অর্থাৎ পূর্বের বেতনে) দায়িত্ব প্রদান করতে পারেন । তবে এখনো পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
রাজস্ব শাখায় জনবল নিয়োগের সিনিয়রদের নামের তালিকা অনুযায়ী মো: সাখাওয়াত হোসেন এবং রমিজুল হাসান সর্বকনিষ্ঠ। যোগ্যতা সম্পন্ন সিনিয়র ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত সুকৌশলে উপ-কর কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন এই ২ জন ট্যাক্স কালেক্টর। অথচ ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত অনেকেই
সিনিয়র ও যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া সত্বেও পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন টেক কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত জসিম উদ্দিন তারেক, আক্তার হোসেন, জাহাঙ্গীর, ফারুক আহমদ ও মাহবুব আলম। এদের কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি । আর রাজস্ব বিভাগের ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে মো: সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান উভয় জন ১৬ নভেম্বর -২০২৩ সালে চাকুরী স্থায়ীকরণ হলেও ঘুষের বিনিময়ে ও বিএনপি তকমায় উপ-কর কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন বলে শুনা যাচ্ছে ।
ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে কর্মরত জসিম উদ্দিন তারেক বলেন,সাবেক মেয়র মনজুরুল আলম থেকেই এই অনিয়ম চলে আসতেছে। সেই সময় আমরা লিখিতভাবে এসব অনিয়মের কথা মেয়ের মহোদয়কে জানিয়েছিলাম কিন্তু কার্যত কোন কিছুই হয়নি। চসিকের পদোন্নতিতে এটা যেন চিরাচরিত নিয়ম হয়ে গেছে! কাজ দেখে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না রাজনৈতিক আর স্যারদের
তোষামোদি করতে পারলেই প্রমোশন হয় । ১৯৮৯ সালে চাকুরীর যোগদানের পর থেকে সততার সাথে দীর্ঘদিন চসিকের ট্যাক্স কালেক্টর হিসেবে কর্মরত আছি । কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকা আর বড় স্যারদের কথামতো যোগাযোগ মেইনটেইন করতে না পারায় আমার কপালে পদোন্নতি জোটেনি।
অভিযোগ রয়েছে, উপ-কর কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টারত মো: সাখাওয়াত হোসেন ও রমিজুল হাসান দুইজনেই দাপটের সাথে নিজেদের নির্ধারিত অফিসে কাজ না করে হেড অফিসে বসে থাকেন। বিগত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী ছিলেন, সরকারের পট পরিবর্তনের পর এবার তারা নিজেদেরকে বিএনপি পরিচয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে নিচ্ছেন।
এক্ষেত্রে ঘুষের বিনিময়ে নানান কারসাজি করেছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারী থেকে ঘুষ বাণিজ্য সহ নানান অনৈতিক সুবিধা ভোগ করেছেন । বর্তমানে মেয়র মহোদয়ের কাছে বিএনপি’র অনুসারী সেজে সব রকমের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্যাক্স কালেক্টর বলেন, তিনি আরো বলেন ্চসিকে যোগদানের নামের তালিকা অনুযায়ী সিনিয়রদেরকে পদোন্নতি দিলে আমাদের কোন আপত্তি নাই। তবে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদেরকে পদায়ন করা হলে এটা বড় বৈষম্য সৃষ্টি হবে ফলে চাকুরি ক্ষেত্রে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। চাকুরীর বিধি বহির্ভূত কেউ পদোন্নতি পেলে এটা টেকসই হবে না। এমন কান্ড ঘটলে সিনিয়রদের থেকে জুনিয়রদেরকে স্যার হিসেবে ডাকতে হবে।
চসিক চাকুরী বিধি অনুযায়ী উপ-কর কর্মকর্তা পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ন্যূনতম স্নাতক ও সমমান ডিগ্রির সাথে অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে অতিরিক্ত দায়িত্বে হিসেবে ন্যূনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্নাতক ও সমমান ডিগ্রি সম্পন্ন সুন্দর আচরণধারী কে পদায়ন করা যেতে পারে।
কিভাবে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মো: সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শুনেছি ৯ জনের প্রমোশন হচ্ছে তবে আমার নাম ওইখানে আছে কিনা তা আমি জানিনা। আমি এখনো চিঠি পাইনি। অপরজন রমিজুল হাসান থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুই জানি না এটা একটি ভুয়া খবর , ভুয়া খবর বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চসিকের মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে চসিকের সচিব আশরাফুল আমিন এই প্রসঙ্গে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি জেনেছি তবে বিষয়টির সম্পূর্ণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার এখতিয়ারভুক্ত। ক্ষমতা বলে তিনি চাইলে যেকোনো কাউকে যেকোনো জায়গায় পদোন্নতি দিতে পারেন। এক্ষেত্রে অনৈতিক কোন বিষয় আছে কিনা তা আমার জানা নাই।
সংবাদটির পাঠক সংখ্যা : ৪৬