মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ।।
চট্টগ্রাম ডিসিও অফিসের স্টেনো গোলাম কিবরিয়া জেড টাইপ বাসার এন্টাইটেল না হয়েও ক্ষমতার বলে আম বাগান গার্লস স্কুলের বাসার সামনে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেন।রেলে লস করেছে। প্রথম স্ট্যাটাস। ডিসিও চট্টগ্রাম অফিসে স্টেনো গোলাম কিবরিরায়া আউটসোর্সিং নিয়োগপ্রাপ্তদের নিকট হইতে কর্মকর্তাদের নাম করে দুই হাজার টাকা ঘুষ নেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসান হাসান নামের একটি ফেসবুক আইডির দ্বিতীয় স্ট্যাটাস। এমন স্টাটাস দুটি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাড়ই বেশ সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
রেলওয়েতে আউটসোর্সিংয়ে চাকরি পেতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গুণে দিতে হয়েছে লাখ টাকা ঘুষ। ভাল জায়গায় পোস্টিংয়ের নামে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগ সাজসে বাগিয়ে নিচ্ছেন ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমন অভিযোগ করেছেন সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) দপ্তর থেকে সদ্য পোস্টিং পাওয়া আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগকৃত শ্রমিকরা।
স্ট্যাটাস অনুসন্ধানে জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) অফিস থেকে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ১০০ জন শ্রমিককে পোস্টিং দেওয়া হয় সম্প্রতি। যাদের প্রত্যেকের কাছ আদায় করা হয় ঘুষ। শ্রমিকদের অভিযোগ চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে পোস্টিং পাওয়া শ্রমিকদের কাছ থেকে আদায় করা হয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এভাবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়। এই ঘুষ আদায়ে নেপথ্যের মধ্যমণি হিসেবে কাজ করেন ডিসিওর স্টোনো গোলাম কিবরিয়া।
যার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকে নানাভাবে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সাপ্লাই কাজের ফাইল থেকে ২% কমিশন আদায়, ভুয়া সাপ্লাই কাজ দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দ তছরুপ, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের বার্ষিক ইউনিফর্ম (পোশাক, টুপি, জুতা, টর্চলাইটসহ নানা উপকরণ) বিতরণের বরাদ্দ থেকে মাথাপিছু অর্থ হাতিয়ে নেওয়া বা আত্নসাৎসহ নানা খাত থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। অবশ্যই এর পেছনে নিরব সমর্থন রয়েছে ডিসিওর।
কারণ ডিসিওর নানা দূর্নীতির সহযোগী এই গোলাম কিবরিয়া। কথিত আছে, কমিশন বাণিজ্যসহ ডিসিওর নানা কাজের দূর্নীতির টাকা যায় গোলাম কিবরিয়ার হাতে। যার কারণে ডিসিওর দূর্নীতির বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলে কিছুই বলতে পারে না কেউ। তুষের আগুন জ্বলে শুধু ভুক্তভোগী ঠিকাদার-সাপ্লাইয়ারদের অন্তরে। আর গোলাম কিবরিয়া সবার কাছে বলে বেড়ায় ডিসিও খুব ভালো মানুষ। এমন প্রশংসা চলছে সিআরবি থেকে সদ্য বদলি হয়ে আসা বর্তমান ডিসিও তৌষিয়া আহমেদের। একই প্রশংসা চলেছে বিদায়ি ডিসিও তারেক ইমরানের ক্ষেত্রেও। এ কাজে আখেরে লাভ গোলাম কিবরিয়ার। স্টোনো হিসেবে বহাল থেকে তিনি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুষ বাণিজ্য।
ঠিকাদার-সাপ্লাইয়ারদের ক্ষোভের মুখে সম্প্রতি ডিসিওর দপ্তর থেকে তাকে একই ভবনের পার্শ্ববর্তি বিভাগীয় ভূমি দপ্তরে বদলি করা হলেও তা ঠেকিয়ে তিনি পুনরায় ফিরে আসেন ডিসিওর সেই পূরণো চেয়ারে। যেখানে বসেই বেপেরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন গোলাম কিবরিয়া। অবশ্যই বদলি ঠেকাতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয়, গোলাম কিবরিয়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের উর্ধ্বতন মহলকে খুশি রেখে চট্টগ্রাম মহানগরীর আমবাগান এলাকায় রেলের বিপুল জমি অবৈধভাবে দখল করে ভাড়াঘর বাণিজ্যও পরিচালনা করছেন। যেখান থেকে ভাড়া বাবদ তার প্রতিমাসে আয় লাখ টাকারও বেশি।
এসব বিষয়ে কথা হয় ডিসিও অফিসের স্টোনো গোলাম কিবরিয়ার সাথে। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আউটসোর্সিংয় পোস্টিং দে কে? নিয়োগকৃতদের পোস্টিংয়ের সাথে আমি কোনভাবে জড়িত নই। পোস্টিং দিয়েছেন ডিসিও তৌষিয়া ম্যাডাম। সহযোগী ছিলেন শারমিন ও সুমন। এ অবস্থায় পোস্টিংয়ের নামে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভাল জায়গায় পোস্টিংয়ের জন্য ২ হাজার টাকা করে নেওয়ার কথা হয়েছে আউটসোর্সিং শ্রমিকদের সাথে। কিন্তু এই টাকা নেওয়া হয়েছে কি না, সেটা আমার জানা নেই। এসবের সাথে আমি জড়িত নই। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক আউটসোর্সিং শ্রমিক নিশ্চিত করেছেন. প্রত্যেকের কাছ থেকে গোলাম কিবরিয়া ঘুষের এই টাকা নিয়েছেন। প্রয়োজন হলে গোপনীয়তার শর্তে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুষ দেওয়ার প্রমাণও দিবেন।
২ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হাছান হাছান নামে একজন গোলাম কিবরিয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন। এতে তিনি গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি করেছেন। বিষয়টি গোলাম কিবারয়ার নজরে আনা হলে, তিনি বলেন. হ্যাঁ বিষয়টি আমি জানি। তাকে আমি চিনি। আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করব।
তাছাড়া ফাইল ছাড়া থেকে কমিশন আদায়সহ নানাভাবে ঘুষ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন, সব মিথ্যে কথা। যারা বলছে তারাই এসব করে। বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন, বদলি করা হয়েছিল। তবে বদলি আমি ঠেকায়নি। আমার ডিসিও ম্যাডাম আমাকে ছাড়েনি।
ঘরভাড়া বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন, এটা তো রেলের সব কর্মকর্তা-কর্মচারি করছে। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারির কাছে রেলের জায়গার উপর ঘরভাড়া নাই। সবাই করছে, আমি করলে দোষ কি?
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তৌষিয়া আহমেদ বলেন, আউটসোর্সিং লোকদের পোস্টিং দিতে হবে, দিয়েছি। এদের কক্সবাজার পর্যন্ত দেওয়ার কথা ছিল, পরে নানা আপত্তির কারণে ওদের চট্টগ্রামেই পোস্টিং দিয়েছি। পোস্টিংয়ে তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। কেউ যদি বলে থাকে তার নাম বলুন। আর কে নিয়েছে তার নামও বলুন। আমি ব্যবস্থা নেব।
এ সময় স্টোনো গোলাম কিবরিয়ার বক্তব্য সামনে আনা হলে তিনি কিছুটা ইতস্থত বোধ করেন। এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি নিরব থাকেন। গোলাম কিবরিয়ার বদলি, কমিশন বাণিজ্য ও ঘরভাড়া বানিজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও তিনি আর কোন উত্তর দেননি।
সংবাদটির পাঠক সংখ্যা : ৩৮