বৃহস্পতিবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের দূর্নীতিবাজ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপ সচিব ওএসডি

আনন্দের বন্যা বইছে, তবে চেয়ারম্যান ও সহকারি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে থাকায় ভয় এখনও তাড়া করছে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

.অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান ও বেলাল হোসেন শিক্ষাবোর্ডে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। ফলে নওফেলের আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম এবং শিক্ষাবোর্ডের জালিয়াত স্যার হিসেবে পরিচিত সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান গণির প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সনদ বাণিজ্য, নাম সংশোধন, পরীক্ষার ফল বাণিজ্য, উপকরণ কেনাকাটাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন বেলাল হোসেন। 

নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির দায়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান ও উপ–সচিব মো. বেলাল হোসেনকে ওএসডি করা হয়েছে। প্রেষণে নিয়োগ প্রত্যাহার করে তাদেরকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এই খবরে আনন্দের বন্যা বইছে শিক্ষাবোর্ডে, তবে মুজিব-বেলাল সিন্ডিকেটের মূল হোতা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ও সহকারি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান গণি বহাল তবিয়তে থাকায় ভয় এখনও তাড়া করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (সরকারি কলেজ-২) মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাদের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে কর্মস্থল ছাড়তে বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) শেষ বেলায়। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বোর্ডের নতুন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রেষণে চট্টগ্রামে আসছেন এনসিটিবির (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। আর উপসচিব হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম।

শিক্ষাবোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী চাকরি প্রবিধিমালা (১৯৯৭) লঙ্ঘন করে উপ-সচিব পদে মো. বেলাল হোসেনকে পদায়ন করে মন্ত্রণালয়। সে সময় মো. বেলাল হোসেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।আর গত কয়েকমাস আগে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ দাসকে ছেলের পরীক্ষার ফল জারিয়াতির দায়ে অপসারণের পর অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমানকে এই পদে পদায়ন করা হয়।

আরও পড়ুন  মাতৃসদন ক্লিনিকের কর্মচারীই ‍চোর চক্রের সদস্য : শিশু উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫

অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান ও বেলাল হোসেন শিক্ষাবোর্ডে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। ফলে নওফেলের আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম এবং শিক্ষাবোর্ডের জালিয়াত স্যার হিসেবে পরিচিত সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান গণির প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সনদ বাণিজ্য, নাম সংশোধন, পরীক্ষার ফল বাণিজ্য, উপকরণ কেনাকাটাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন বেলাল হোসেন।

এ সময় তিনি এক সময় ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন-এই হুমকিতে শিক্ষাবোর্ডের সর্বত্র একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। এভাবে তিনি এখন চট্টগ্রাম শহরে বহুতল ভবন ও একাধিক প্লটসহ শতকোটি টাকার মালিক। শতকোটি টাকার মালিক সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান গণিও। গত ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর তাদের দূর্নীতি নিয়ে ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড গিলে খাচ্ছে চেয়ারম্যান-উপসচিব চক্র, নেপথ্যে নওফেল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যা নিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়লেও দূর্নীতিবাজ শিক্ষামন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম-ওএসডি হওয়া বেলাল ও সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওসমাণ গণি সিন্ডিকেটের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাঁপছে শিক্ষাবোর্ডের অনিয়ম ও দূর্নীতি বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। যাদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিরোধীয় এসব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে। এর মধ্যে বেলাল হোসেনের ওএসডির খবরে শিক্ষাবোর্ডে আনন্দের বন্যা বইছে। তবে চেয়ারম্যান ও সহকারী হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে থাকায় ভয় এখনো তাড়া করছে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।

এ নিয়ে ভুক্তভোগী এক কর্মচারি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওএসডি হওয়াটাও বেলাল হোসেনের পাপের যথাযথ শাস্তি হয়নি। ওএসডি করে তাকে যেখানে পদায়ন করা হয়েছে, সেখানে না দিয়ে পঞ্চগড় দিলে হয়তো একটু শাস্তি হতো। তবে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং অনিয়ম দূর্নীতি তদন্ত করে কারাগারে নিক্ষেপ করাই হতো তার পাপের উপযুক্ত শাস্তি।

আরও পড়ুন  পবিত্র রমজানের অফিস ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা

এদিকে দেশের অপর দুই শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে এবং দুটি শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক পদেও রদবদল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের নতুন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হয়েছেন বরিশালের চাখারের সরকারি ফজলুল হক কলেজের অধ্যাপক জি এম শহীদুল ইসলাম। এ বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ কুমার গাইনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

ঢাকা কলেজের অধ্যাপক রুনা নাছরীন কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন। ওই পদে এতদিন দায়িত্ব পালন করে আসা অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানকে ওএসডি করা হয়েছে। এনসিটিবির কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদে এসেছেন ঢাকা কলেজের অধ্যাপক ড. ইরম জাহানকে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক মো. এনামুল হককে ওএসডি করে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক মো. মাহবুব হাসানকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্ব পেয়েছেন টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যাপক মো. নূরন্নবী আলম। আগের পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারীকে পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে বদলি করা হয়েছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে সংযুক্ত অধ্যাপক মো. সামছুল ইসলামকে ওএসডি করে ওই পদে কুমিল্লার গৌরিপুর মুন্সি ফজলুর রহমান কলেজের অধ্যাপক ছৈয়দ আক্তারুজ্জামানকে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সচিব অধ্যাপক আমিরুল মোস্তফাকে নোয়াখালীর চৌমুহনীর সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজে বদলি করা হয়। তার জায়গায় অধ্যাপক ড. এ কে এম সামছু উদ্দিনকে প্রেষণে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি নওগাঁ সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান।

শেয়ার করুন