বৃহস্পতিবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্থানীয় মেম্বার বলছেন আগুন দেওয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত

বাঁশখালী পশ্চিম বড়ঘোনা ব্যাংকার নাসির উদ্দিনের ঘরে দুর্বৃত্তদের আগুন

মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি।

বাঁশখালী উপজেলা গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকার ব্যাংকার নাসির উদ্দিনের ঘরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুকুর থেকে পানি তুলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি   হয়নি। অল্পের জন্য বেঁচে গেল অনেক পরিবার।

রবিবার ৩রা ফেব্রুয়ারি গন্ডামারা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড, (গন্ডামারা বড়ঘোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শে) ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ- সভাপতি মরহুম মেম্বার অলি আহমদের বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুপুর ২ টার দিকে ওই বাড়ির বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের ঘরে আগুনে জ্বলতে দেখে এলাকাবাসী দৌড়ে এসে পাশবর্তী পুকুর হতে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা যায় মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম মেম্বার অলি আহমদের দৌহিত্র এবং মরহুম নুরুল ইসলামের প্রথম পুত্র। বর্তমানে সে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক পিএলসি যশোর মনিরামপুর শাখায় কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখ্য নাসির উদ্দিন সাবেক ছাত্রদল নেতা ছিলেন ও গন্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদের সহ- অর্থ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,নাসির উদ্দিন একজন শান্ত সৃষ্ট নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির মানুষ হন।ছোটকাল থেকে তার শৈশব বেড়ে উঠা ওই গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে জায়গা জমি ও সীমানা নিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষের সাথে তার বিরোধ রয়েছে।এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি তার অনুকূলে না থাকায় সে স্ত্রী সন্তান মা নিয়ে বাঁশখালী জলদি পৌরসভায় সদরে বসবাস করেন।

নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ঘরে কেউ থাকিনা ঘর তালাবদ্ধ। তবে আমার ঘরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা আমি জানিনা। এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ হয়ে গেছে তা আমার ভাবতেও অবাক লাগে।আমি কারো কোন ক্ষতি করি নাই চাকরির সুবাদে যশোরে অবস্থান করি। আমার মা স্ত্রী সন্তানরা জলদি পৌরসভায় বসবাস করেন । গতবছর কালবৈশাখী ঝড়ে যখন পল্লী বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখনও স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল দলীয় প্রভাব কাটিয়ে,পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অবৈধ ভাবে টাকা লেনদেন করে আমার বসতভিটার অনেক গাছগাছালি কেটে পেলা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন সিকদার আবু কে অবগত করলেও কোন সুরাহ মিলেনি। আমার এলাকাটা এখন মাদকের সাম্রাজ্য পরিণত হয়েছে ,এখানে কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়।এলাকায় ভালো মানুষের কোন মূল্য নাই।এই বিষয়ে আমি জান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনের আশ্রয় নিব। আশা করি প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন  গণ্ডামারা ইউনিয়ন উন্নয়ন পরিষদ চট্টগ্রামের গুণীজন স্মরণ সভা আগামী ১৯ ডিসেম্বর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বর্তমানে এখানে বসবাস করা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকার মানুষ এস আলম এর কাছে এক বা একাধিক প্রাপ্যতার হিস্যার চেয়ে বেশি জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করার পর দখল বেদখল নিয়ে নানান জামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। পুনরায় ওই জায়গা দখলে নেওয়ার নানান ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত রয়েছে কিছু কুচক্রী মহল। বর্তমানে এই এলাকায় বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মসস্থান হারিয়ে অনেক যুবক চুরি ডাকাতি মাদকাসক্তে হয়ে নানান অপরাধ কর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। গন্ডামারা ইউনিয়নের অনেক জায়গায় ভূমি দস্যুদের দাপট, দালাল, চোর সিন্ডিকেট ও মাদকের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে। অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্থানীয় মানুষের সালিশ বিচার ও আইন আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে এসব অনৈতিক কাজ করেই যাচ্ছে। এদের অত্যাচার নিপিডনের হাত থেকে বাঁচতে নিজের বাপ দাদার বিটা বাড়ি ছেড়ে এলাকার অনেক সুশীল মানুষ বর্তমানে নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে ইউনিয়নের বাইরে বিভিন্ন শহর এলাকায় বসবাস করছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হোসেন সিকদার আবু থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাসির উদ্দিনের ঘরে আগুন ধরেছে জেনেই আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম।শুনলাম ঘরের আশেপাশের মানুষ আগুন লেলিহান শিখা দেখে মুহূর্তের মধ্যে আগুন নিভাতে সক্ষম হয়, তবে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদি আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসতো তাহলে পুরো বাড়িতে আগুন ধরে যেত।এতে ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হত বেশ কয়েকটি পরিবারের।
আগুনের সূত্রপাত কোন জায়গা থাকা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বিদ্যুৎ বা রান্না ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেনি। ঘরের দক্ষিণ পাশে আগুন লাগার স্থান ও ধরণ দেখে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা যেই করুক না কেন অবশ্যই নিন্দনীয়।

বাঁশখালী থানার অফিস অফিসার্স ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আপনার থেকে শুনলাম। দিনের বেলায় কিভাবে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় তা আমার জানা নাই।আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি তবে এখনো পর্যন্ত কারো কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

শেয়ার করুন