আওয়ামী লীগের শাসন আমলের যৌবনকালে বিএনপি’র বড় বড় নেতারা যখন মামলা মোকদ্দমায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভয়ে লুকিয়ে ছিল। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর মাঠে ময়দানে বিএনপির যে কয়েকজন নেতাকে আন্দোলন সংগ্রামে দেখা গেছে তার মধ্যে অন্যতম বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী। বিএনপি’র দুর্দিনের সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বাঁশখালীতে “খুনি হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে জেলের তালা ভাঙবো খালেদা জিয়াকে আনবো নানান স্লোগান দিয়ে খুব বেশি সরব ছিলেন লেয়াকত আলী।এজন্য তাকে জেল-জুলুম মামলা হামলা শিকারও হতে হয়েছে।
আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিএনপি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে বাঁশখালী ১৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তিনি।
লিয়াকত আলী দল থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর বিভিন্ন সভা সমাবেশে দলের প্রতি তার ডেডিকেশন এর কথা উল্লেখ করে বাঁশখালী মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

দলের মনোনয়ন না পেলেও চট্টগ্রাম-১৬ আসন (বাঁশখালী) থেকে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আলোচিত চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোহাম্মদ লেয়াকত আলী।
বৃহস্পতিবার বিকালে ফেইসবুকে ভিডিও বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
লেয়াকত বলেন, “আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি মাঠেঘাটে মানুষের সঙ্গে, কর্মীদের দুরাবস্থায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতাম। আমার রাজনীতি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেও আপনারা আমাকে বুকে টেনে না নিয়ে পারবেন না। এটা আমার বিশ্বাস ছিল।
আমি কখনো সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ড্রইং রুমে হাজিরা দিতাম না। যে কারণে বাংলাদেশের ড্রইং রুম পলিটিক্সে আমি বারবার পরাজিত হয়েছি।”
গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে দলটির দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে। তিনি সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে। জাফরুল ইসলাম এ বাঁশখালী আসন থেকে ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার দফায় সংসদ সদস্য ছিলেন।
অপরদিকে লেয়াকত আলী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাঁশখালী উপজেলার ৯ নম্বর গণ্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
২০১৬ সালে গণ্ডামারায় এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জায়গা অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধে স্থানীয়দের নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনায় আসেন লেয়াকত।
ওই বছরের ৪ এপ্রিল গণ্ডামারা ইউনিয়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে বসতভিটা রক্ষা কমিটির ব্যানারে আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষের চারজন নিহত হন।
আন্দোলনকারী বসতভিটা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন লেয়াকত আলী। ওই বছরের ১৬ মে লেয়াকতের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পর তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়। পরে অবশ্যই এস আলম এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। পরে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে গণ্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
গত ২২ নভেম্বর বাঁশখালীর জলদীতে সমাবেশ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ভিডিও বার্তায় লেয়াকত বলেন, তিনি কৃষকের ঘরে জন্ম নেওয়া শ্রমিকের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠা একজন রাজনৈতিক কর্মী। গত ২২ নভেম্বর জলদী হাই স্কুল মাঠে জনসভা ডেকেছিলাম। সেখানে লাখো মানুষের উপস্থিতি আমাকে প্রেরণা জাগিয়েছে। আপনারা সেদিন আমাকে নির্বাচন করার পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শকে আদেশ মনে করে আমি সেদিন নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছিলাম।
“তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আমি আপনাদের পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করতে চাই, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।”












