সোমবার, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যাত্রীবাহী বিমান বানিয়ে নিজেই সেই বিমানের যাত্রী হতে চান, ক্ষুদে বৈজ্ঞানিক আশির

যাত্রীবাহী বিমান বানিয়ে নিজেই সেই বিমানের যাত্রী হতে চান বাঁশখালীর ক্ষুদে বৈজ্ঞানিক আশির।

বাঁশখালীর  পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুঁইছড়ি ছমদ আলী সিকদার পাড়ার মো. শাহাব উদ্দিনের তিন সন্তানের মধ্যে বড় মো. আশির উদ্দিন (২২)। চার বছরের সাধনায় তৈরি করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯ ধরনের বিমান। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোথাও প্রশিক্ষণ নিয়ে নয়, ছোটকাল থেকে আপন মনে খেলতে খেলতে এই স্বপ্নের বাস্তব রূপ।
২০১৫ সালে পুঁইছড়ি ইজ্জতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০১৮ সালে মাস্টার নজির আহমদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ইঞ্জিনিয়ার ডিপ্লোমা কোর্সে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট সামশুন্নাহার পলিটেকনিকে ভর্তি হন। বর্তমানে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। করোনার কারণে অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন নিজ বাড়িতে।
আশির উদ্দিন মানবজমিন কে বলেন, ছোটকাল থেকে টেকনিক্যাল কাজ নিয়ে চিন্তা করতাম। আকাশে বিমান উড়তে দেখে মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম, আমি একটা বিমান বানাতে চাই। পরে হাত খরচের টাকা দিয়ে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে আকাশে ওড়া নানা ধরনের বিমান বানানোর স্বপ্ন দেখি। তৈরি করি, নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে শতাধিক বিমান ক্রাশ করে।
তিনি জানান, ২০১৭ সালে প্রথম বিমান তৈরি করি। তারপর ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। এর মধ্যে আমার তৈরি বিমান আকাশে ওড়াতে দেখে এলাকার লোকজন ও বন্ধুবান্ধব আমাকে উৎসাহিত করে। এরপর একে একে ড্রিম লাইনার ৭৮৭, ইউএস বাংলা, এমকিউ ড্রোন, এমআইডি ২৯, হেলিকপ্টার, এয়ার বোট, এলউইন ইঞ্জিন, ড্রিল মেসটন ও ওয়াথার পাম্প বানাতে সক্ষম হই। তা পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আশেপাশে চালিয়ে সফলতা পাই। এসব বানানোর পর ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে ৫০ থেকে ৬০টি নানা ধরনের বিমান বিক্রিও করেছেন তিনি।
আশির বলেন, আমার স্বপ্ন, যাত্রীবাহী বিমান বানানো। সে বিমানে আমি নিজেও যাত্রী হয়ে ঘুরতে চাই। তার জন্য প্রয়োজন সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা। তিনি বলেন, এসব কাজ করার জন্য কারো কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা নিইনি। এ কাজ আরো বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহযোগিতা চাই। তিনি জানান, বর্তমানে ইউটিউব থেকে কিছু আয় আসে। সে টাকাও এ কাজে ব্যয় করি।
তিনি বলেন, বিমান তৈরি করতে কি কি প্রয়োজন, কোথায় কি সংযোজন করতে হবে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনে কাজ করতাম। রিমোট কন্ট্রোলার ছাড়া বাকি সবকিছু আমি সংযোজন করে খুদে বিমান তৈরি করেছি। আজ ৩৩ গ্রাম ওজনের মোটর দিয়ে বিমান তৈরি করেছি। ভবিষ্যতে বড় বিমান তৈরি করতে চাই।
আশির জানান, আগামীতে ৫/৬ কেজি ওজনের মোটর দিয়ে বিমান তৈরি করবেন। বিমানটি ৬০-৭০ কেজি ওজন নিয়ে আকাশে উড়তে সক্ষম হবে। এটি তৈরি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কেউ সহযোগিতা করলে ভবিষ্যতে তিনি আরো বড় বিমান আকাশে ওড়াতে সক্ষম হবেন। ৮শ গ্রাম ওজনের বিমানটি বানাতে ১২ থেকে ১৪ হাজারের অধিক খরচ হয়েছে। এ রকম ক্ষুদ্র বিমান তৈরি করতে ৭ দিন সময় লাগে। তার বিমান এক ঘণ্টা উড়েছে আকাশে।
আশিরের বাবা মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আশিরের কর্মকাণ্ড দেখে আমি খুশি। তবে এ কাজে আরো সফলতা পেতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন