শুক্রবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফের কর্মবিরতিতে ট্রাক-লরি শ্রমিকরা

এটা কি মগের মুল্লুক!

চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা

মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি।

মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি রাত দশটায় দেয়ানহাট মোড়ে জ্যামে পড়ি । মনে করেছি স্বাভাবিক জ্যামে পড়লাম। একটু একটু করে আগ্রাবাদ পর্যন্ত আসলাম আর সামনে গাড়ি চলেনা। অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি কখন গাড়ি চলবে। কিন্তু দেখলাম ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অতিবাহিত হলেও এই জ্যাম শেষ হয় না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তার মাঝখানে আমার প্রাইভেট মাইক্রো গাড়ি নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে যায়। দুই পাশের সড়কেই গাড়ি জ্যাম কোন দিকে যাওয়ার সুযোগ নাই। এভাবেই সারারাত কাটিয়ে দিয়েছি একই জায়গায়। প্রশ্ন আমার এটা কি মগের মুল্লক! এই রাস্তা কি কারো বাপ দাদার সম্পত্তি, সড়ক দখল স্ট্যান্ড বাজি করে আন্দোলন। এগুলোকে আন্দোলন বলে? ড্রাইভার শ্রমিক আন্দোলন করবে! তারা গাড়ি চালাবে কি চালাবে না, ঘরে বসে থাকবে সেটা তাদের ব্যাপার। সড়ক বন্ধ করে এটা কোন ধরনের আন্দোলন? এই দেশে কি কোন অভিভাবক নাই? কোন কিছুই হলেই সড়কে নেমেই আন্দোলন। এই ধরনের আন্দোলনকে আমি ধিক্কার জানাই । যে কোন মানুষের যৌক্তিক আন্দোলন থাকতেই পারে তার মানে কি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে, মানুষকে হয়রানি করে কি আন্দোলন করতে হবে?  এটাকে আন্দোলন বলে না। সাধারণ মানুষের সাথে তাদের আন্দোলনের সম্পর্ক কি? কেন সাধারণ মানুষ রাস্তায় কষ্ট পাবে? এগুলো এক প্রকার মানুষকে জিম্মি করা ছাড়া আর কিছু নয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্দোলনকারীদের কে সরকারের পক্ষ থেকে কটুর হস্তে দমন করতে হবে । নয়তোবা এই জাতি কোনদিনও সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে না। উল্লেখিত কথাগুলো বলছিলেন, সড়কে আটকে পড়া পতেঙ্গা অভিমুখী আবুল কালাম।এই ধরনের অভিযোগ শত শত ভোগান্তির শিকার রাস্তায় চলাচলরত  মানুষের।

ফের কর্ম বিরতিতে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রলির শ্রমিকরা। সমগ্র বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের অচল অবস্থা বিরাজ করছে । চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক খোলা থাকার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে নেমেছে শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে নগরীর বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিং সড়কে ট্রলি ও ট্রাক রেখেই কর্মবিরিতি শুরু করেন শ্রমিকরা। কর্মবিরতির ফলে টানা দ্বিতীয় দিনে ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর, ইপিজেড, প্রবেশ বহির্গমন বন্ধ রয়েছে সব ধরনের পণ্য পরিবহন গাড়ি। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট চলাচলরথসা সাধারণ মানুষ।
এর আগে চট্টগ্রাম বিসি পার্কের নিরাপত্তা কর্মী ও ট্রলি ও ট্রাক শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষের পর ঘটনায় জড়িতদের বিচারসহ চার দফা দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাত ৯ টা থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্ম বিরতি শুরু করেন প্রাইম মুভার ট্রলির শ্রমিকরা। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকের পর বুধবার রাত ৮ টার দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। কিন্তু ১৪ ঘন্টা সময় পার হতে না হতেই পুনরায় কর্মবিরতিতে নামেন শ্রমিকরা।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা জানান, জেলা প্রশাসনের বৈঠকে ডিসি পার্ক বন্ধ রাখা,ট্রাক লরি চালকদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান,ঘটনায় জড়িতদেরকে বিচার নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি মেনে নেওয়া হয়েছিল । কিন্তু বুধবার রাত এই ঘটনায় শ্রমিকদেরকেও অজ্ঞাত আসামি করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।যার ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতিতে নামেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের দাবি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম ডিসি পার্ক তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু সেটা আমরা মানছি না। এই পার্ক স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে নয়তো বা ডিসি পার্কের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামের সড়ক বাদ দিয়ে বিকল্প সড়ক করতে হবে। এই দাবি না মানলে কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকাল চলবে।
এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক  আবুল খায়ের জানান, বুধবার জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে দাবি মেনে ও দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। শ্রমিকদেরকে মারধরের ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করি। পড়ে দেখলাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ কারণে আমাদের শ্রমিকরা সসল্টগোলা ক্রসিং মোড়ে ও রাস্তায় ট্রাক ও লরি পার্কিং করে রেখে কর্মবিরতি পালন করছে ।

আরও পড়ুন  ফ্যামিলি কার্ড ছাড়াও মিলবে টিসিবি’র পণ্য

প্রসঙ্গত গত বুধবার রাত ৯ টা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত উত্তেজিত শ্রমিকরা সম্পূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে রাখে। ওই সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ায় থমকে যায় সড়কে মানুষের চলাচল গাড়ি যেখানকার গাড়ি সেখানেই ওই অবস্থায় সারারাত রাস্তায় কাটিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

এই কারণে নগরীর আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পতেঙ্গার স্টিল মিল সড়ক ও বন্দর পোর্ট কানেক্টিং সড়কে ব্যাপক যানজটরে সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেড পণ্য পরিবহনের অচলাবস্থা দেখা গিয়াছে। পোশাক কারখানাগুলোর ছুটির পর তাদের হেঁটে গন্তব্য যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া দিনভর ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী স্কুল -কলেজ গামী শিক্ষার্থীরা ।

এই বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসনের facebook পেইজে পোস্ট করা এক বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনে কাজের জন্য আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিসি পার্ক বন্ধ থাকবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

প্রসঙ্গত মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ডিসি পার্কে গাড়ি পার্কিং এর ঘটনার জেরে লরি শ্রমিকদের সাথে পার্কের দর্শনার্থী ও নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এরপর বিক্ষোদ্ধা ট্রাক লরির শ্রমিকরা পার্কে হামলাও ভাঙচুর চালায়।

শেয়ার করুন