বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এপিবিএন এর ৩ সদস্য সহ ৭ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আজ এ রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। রায়ের পর্যবেক্ষণে এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেছেন বিচারক। এর আগে দুপুর ২টার দিকে ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে কক্সবাজার কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর তাদের আদালতের এজলাসে তোলা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে আলোচিত এই মামলার ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় সিনহার বোন, মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ও তার স্বামী আদালতের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রায়কে ঘিরে কক্সবাজার জেলা আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। আদালতের ফটকসহ সব দিকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত বছর ২৭শে জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত।
আলোচিত এই মামলায় বাদী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। এর মধ্যে প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫শে আগস্ট পর্যন্ত তিনদিনে মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত সাক্ষ্য দেন। দ্বিতীয় দফায় চারদিনে সাক্ষ্য নেয়া হয় চারজনের, তৃতীয় দফায় তিনদিনে আটজনের, চতুর্থ দফায় দুই দিনে ছয়জনের, পঞ্চম দফায় তিন দিনে ১৫ জনের, ষষ্ঠ দফার তিনদিনে ২৪ জনের, সপ্তম দফার তিনদিনে পাঁচজনের এবং অষ্টম দফায় তিনদিনে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামের সাক্ষ্য দিয়ে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়।
এরপর আদালত নবম দফায় ৬ ও ৭ই ডিসেম্বর ১৫ জন আসামির ৩৪২ ধারায় লিখিত ও মৌখিক সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এ মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলামসহ ৬৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্ত কর্মকর্তা এ হত্যাকা-কে পরিকল্পিত বলে আদালতকে জানান। এ মামলার বাইরেও সাক্ষীরা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের দায়িত্ব পালনকালে টেকনাফে নানা নির্যাতনের বর্ণনা দেন আদালতে।
সূত্র মতে, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ থানায় ওসি থাকাকালে মাদক নির্মূলের নামে ২২ মাসে ১৪৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার জন্ম দেন। তাতে মারা গেছেন ২০৪ জন। নিহতদের সবাইকে দেয়া হয়েছে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের তকমা। অথচ সাধারণ মানুষ বলছেন, ক্রসফায়ারে নিহতদের বেশির ভাই ছিল নিরীহ। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে একই পরিবারের তিন ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগ আছে প্রদীপের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১শে জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শাপলাপুর পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর