বৃহস্পতিবার, ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাঁশখালী চা বাগানের পাতার খ্যাতি সারাদেশে 

মুহাম্মদ বাঁশখালী  (চট্টগ্রাম)  প্রতিনিধি।।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্পট  বাঁশখালীর পুকুরিয়া বৈলগাঁও চা বাগানটি যেন সবুজের এক মহাসমারোহ।বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটক চা বাগানটি একনজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
চা উৎপাদনে এই বাগান বর্তমানে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে।বাঁশখালীতে অবস্থিত ৩ হাজার ৪শ ৭২.৫৩ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই চা বাগানটি একসময়ে সিলেট চা বাগানের অধীনে থাকলেও বিগত ২০১৫ সাল থেকে বাগানটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ।
প্রতিদিন ৮ শতাধিক শ্রমিক এই চা বাগানে তাদের শ্রমের মাধ্যমে নতুন পাতা উৎপাদন ট্রেসিং থেকে শুরু করে চা বাগানের সামগ্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯১২ সালে ইংরেজরা যখন বাগানটি শুরু করেন তখন বাগানের ম্যানেজার ছিলেন মি: হিগিন। মাত্র ৮ একর চা বাগানটি বাংলাদেশ চা-বোর্ড ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাঁদপুর বৈলগাঁও চা-বাগানটি ব্যবস্থাপনার জন্য রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারী নিকট হস্তান্তর করেন। পরে ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর সিটি গ্রুপ পরিচালিত ফজলুর রহমান গং এর ভ্যান ওমেরান ট্যাংক টার্মিনাল (বাংলাদেশ) এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়েল মিলস্‌ ক্রয় করেন।
বর্তমানে  কর্মকর্তা কর্মচারী সহ  ৮শ অধিক শ্রমিক কাজ করেন। সারাদেশে ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে বাঁশখালী বৈলগাঁও চা বাগানটি গুণগত মান অনুযায়ী ১২তম এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে ৩য় স্থানে রয়েছে। বর্তমানে চা বাগান এলাকায় ৬৩৮ একর আবাদি এবং ৫০ একর জায়গায় আগর চাষ করা হয়েছে। চাঁদপুর বৈলগাঁও চা-বাগানে শতকরা ৯০ ভাগ ক্লোন চা এবং চায়ের গুণগত মান ভালো। চায়ের উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে আবহাওয়া নির্ভর। সেকারণে চা-বাগানের উপযোগী বৃষ্টিপাতের উপর উৎপাদনের তারতম্য হয়।
২০০২ সালে ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা বাগানটি চলতি বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কেজি। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে বৃষ্টির কারণে বিঘ্ন হয়ে থাকে। প্রতিবছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চা-পাতা উৎপাদন কম হয়ে থাকে। চা বাগানের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক কর্মচারীর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে বলে জানান চা-বাগানের ম্যানেজার আবুল বাশার।
চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিদিন বাগানের সর্বত্র আধুনিক উপায়ে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
 শীতের মৌসুমে  চা-বাগানে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। চা বাগানের যাতায়াতের সড়কটি যথাযথভাবে সংস্কার না হওয়ায় এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য বাঁশখালীর সাংসদ মুজিবুর রহমান সিআইপি নিকট  আবেদন রাখেন এলাকাবাসী।
বাঁশখালীর বৈলগাঁও পুকুরিয়া চা বাগান সরজমিনে পরিদর্শনপূর্বক ম্যানেজার আবুল বাশারের সাথে কথা হয় তিনি জানান,  বাঁশখালীর এই বিশাল চা বাগানের চা পাতার সারাদেশে সুখ্যাতি রয়েছে। এই মানের জন্য চা বাগানের কর্মকর্তারা প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পায় সরকার রাজস্ব তত বেশি পায়। বর্তমানে চা পাতার বিক্রিত অর্থ থেকে সরকার ১৫% হারে ভ্যাট পান। তবে তিনি বাগানের কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, চা বাগানের চারপাশে ঘেরা বেড়া না থাকায় প্রতিদিন হাতির পাল চা বাগানে ছুটে আসে। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রায় শঙ্কিত থাকে।তিনি রাজস্ব আয়ের অন্যতম চা-বাগানকে আরো বেশি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শেয়ার করুন